Saturday, March 15, 2025

ছুটিতে বাড়িতে এসে গ্রামের বাজারে ডিম বিক্রি করছেন চবি ছাত্রী

আরও পড়ুন

পড়াশোনা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার খরচ মেটাতে ছুটিতে বাড়িতে এসে গ্রামের বাজারে ডিম বিক্রি করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা (২১)। মাত্র ১৫ দিনের ছুটিতে নাটোরের বড়াইগ্রাম নিজ বাড়িতে এসেছেন তিনি।

ছুটিতে মা-বাবা ও ছোট বোনের সঙ্গে সময় কাটানোসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানোর কথা টুম্পার। কিন্তু তার ভ্যানচালক বাবা ও পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মেরিগাছা বাজারে দুপুরের পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাঁচা ও সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন। টুম্পার এই ডিম বিক্রির ঘটনা এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

টুম্পা বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রহিমের মেয়ে। গত সপ্তাহে তিনি বাড়িতে এসেছেন এবং ৪ ফেব্রয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ১৬ বছর পর একমাত্র ছেলেকে কাছে পেলেন বাবা-মা পরিবারের সঙ্গে বিল্লাল হোসেন

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির খরচ যোগাতে টুম্পা কয়েন বাজারে একটি রেস্টুরেন্টে কর্মচারীর কাজ করতেন। সে সময় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে অনেকেই তার ভর্তির খরচ যোগাতে এগিয়ে আসেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা জানান, খুবই কম লাভে তিনি ডিম বিক্রি করছেন। প্রতি হালি কাঁচা ডিমে লাভ হচ্ছে মাত্র তিন টাকা এবং সিদ্ধ ডিমে লাভ হচ্ছে গড়ে হালিপ্রতি ৪-৬ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ পিসের মতো ডিম বিক্রি হয়। গত দুই দিনে প্রায় দেড় হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

টুম্পা বলেন, এলাকার খলিসাডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। বাবা ভ্যান চালিয়ে আমাদের দুই বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। অনেকে সহযোগিতাও করেছেন। আমি নিজেও বড় হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ  সৌদি আরবের জাতীয় সংগীতের সুর করবেন এই মার্কিন শিল্পী

গ্রামের বাজারে ডিম বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি কে কীভাবে নেবে সেটা জানি না, আর সেদিকে তাকিয়ে থেকেও আমার চলবে না। কারণ কোনো কাজই ছোট নয়, আমি সৎভাবে আয় করছি। উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়ার পর বাড়তি আয়ের জন্য অনেক কাজ করেন। সেটাকে কেউ ছোট করে দেখে না।

টুম্পার বাবা ভ্যানচালক আব্দুর রহিম বলেন, মেয়ের ইচ্ছাতেই বেড়াতে আসার পর প্রতিদিন ভ্যানে করে মেয়েকে বাজারে আনা নেওয়া করি। টুম্পা অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া আসায় সময় অনেক টাকা ভাড়া লাগে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক খরচ হয়। বাবা হিসেবে সব খরচ দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার। তাই সে নিজেই উপার্জন করে টাকা জোগানোর চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুনঃ  সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে বাংলাদেশ নাকি মিয়ানমার?

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হয়েও বাজারে এভাবে ডিম বিক্রির ঘটনাটি অবশ্যই সাহসী পদক্ষেপ। ইতোপূর্বেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টুম্পাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এরপর টুম্পার সঙ্গে কথা হলে, সে বলেছিল তার বাবাকে একটি ভ্যান কিনে দিতে। এবার তার বাবাকে স্বাবলম্বী করাসহ তাকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ