প্রথম সেটের লড়াই হলো ঠিক ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট। তাতে নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়লেন আলেক্সান্দার জভেরেভ। শুধু কি লড়লেন? সেটটা ৬-৭ গেমে জিতে নিয়ে যায় টাইব্রেকারে। সেখানেও জিতে নেন ৫-৭ ব্যবধানে। কিন্তু এরপর যেটা হলো, সেটা হয়তো কল্পনাও করেননি জভেরেভ। এভাবে ম্যাচটার নিষ্পত্তিও নিশ্চয়ই চাননি।
প্রথম সেট শেষ হতেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনাল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন জোকোভিচ। এতে দুই সেট বাকি থাকতেই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের টিকিট পেয়ে যান জার্মান তারকা জভেরেভ।
প্রথম সেট চলাকালেই বাঁ পায়ের সমস্যায় ভুগতে দেখা গেছে জোকোভিচকে। এ প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলার মাঝে (প্রথম সেটের মাঝে) মেডিকেল টাইম আউট নিয়েছিলেন সার্বিয়ান তারকা। পরে কোর্টে ফিরেছিলেন টেপ মেরে। আজও টেপ মেরেই খেলতে নেমেছিলেন। কিন্তু এবার চালিয়ে যেতে পারলেনে না। সেট শেষ হতেই জানিয়ে দেন, এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তাঁর যাত্রা এখানেই শেষ।
কোর্টের অপরপ্রান্তে দাঁড়ানো জভেরেভের যেন এটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। অন্যদিকে কোর্ট ছাড়ার সময় রড লেভার অ্যারেনাতে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে হাত উঁচিয়ে ধরেন জোকোভিচ। কিন্তু এ সময় গ্যালারি থেকে দুয়োধ্বনি ওঠে জোকোভিচের নামে। তবে দুয়োর বিপরীতে জোকোভিচ দুই হাতে থাম্বস আপ দিয়ে বুঝিয়ে দেন, সমর্থকদের দুয়োর বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন তিনি।
তবে এ দুয়ো ভালো লাগেনি জভেরেভের। ম্যাচ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জার্মান তারকা বলেছেন, ‘সবার আগে যে কথাটা বলতে চাই, দয়া করে চোটের কারণে কোনো খেলোয়াড় সরে দাঁড়ালে তাঁকে দুয়ো দেবেন না।’
জভেরেভ যোগ করেন, ‘আমি জানি, সবাই অর্থ খরচ করে টিকিট কিনেছেন এবং পাঁচ সেটের দুর্দান্ত একটা ম্যাচ দেখতে চান। কিন্তু আপনাদের এটাও বুঝতে হবে, গত ২০ বছর ধরে নোভাক জোকোভিচ টেনিসকে সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছেন। তিনি তলপেটের ব্যথা নিয়ে কিংবা হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও এ টুর্নামেন্ট জিতেছে। তার এ ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়ানোর অর্থ হলো, তিনি সত্যিই (চোটের সঙ্গে) পেরে উঠছিলেন না।’
নাম প্রত্যাহার নিয়ে জোকোভিচ বলেছেন, ‘আলকারাসের বিপক্ষে (কোয়ার্টার ফাইনাল) ম্যাচের পর থেকে আজকের ম্যাচের এক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত আমি একটা বলও মারিনি। আমার যে পেশিটা ছিড়ে গিয়েছিল, সেটা ঠিক করতে আমি সম্ভাব্য সবকিছু করেছিলাম। মেসিডিন, স্ট্র্যাপ, ফিজিওর কাজগুলো অবশ্য আজকে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে। কিন্তু প্রথম সেটের শেষ দিকেই আমি প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকি। এটা এতটাই বেশি ছিল যে, আমার পক্ষে আর টুর্নামেন্টে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক সমাপ্তি। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছিলাম।’
আসলেই দুর্ভাগ্যজনক বলতে হয় এমন বিদায়কে। ২০২৩ ইউএস ওপেন জেতার পর থেকে ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যামের খোঁজে একের পর এক গ্র্যান্ড স্লাম থেকে খালি হাতে ফিরেছেন সার্বিয়ান কিংবদন্তি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা রেকর্ড ১০ বার উঁচিয়ে ধরেছেন আগেই। এবার সংখ্যাটা আরও বাড়ানোর পথেই ছিলেন। কিন্তু হার মানলেন চোটের কাছে।
অন্যদিকে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার ওপেনের ফাইনালে ওঠা জভেরেভের প্রতিপক্ষ অবশ্য এখনো নির্ধারিত হয়নি। আগামী রোববার ইয়ানিস সিনার ও বেন শেলটনের ম্যাচে যে জিতবেন, তাঁর সঙ্গেই লড়বেন জার্মান তারকা।